বুকের ভেতর ঘুম-পাওয়া দীর্ঘশ্বাস নিয়ে।
তার পাড়ে বসে আছে রমেশ, একলা।
কাঁধে পুরনো চাদর, চোখে ধুলোমাখা বিকেল।
গাঁয়ের মাথার ওপারের তালগাছগুলি তখনো নড়ে,
যেন কিছু বলতে চায়, আবার থেমে যায়।
হাওয়া বইছে ধীরে—
সুন্দরীর চুলে হাত বুলানোর মতো।
গাঁয়ের মেয়েগুলি হাঁসের পাল নিয়ে ঘরে ফিরছে,
কাঁধে কলসি, মুখে হেসে ওঠা ছায়া।
রমেশ চেয়ে থাকে—
কোনো মুখে সুধার মতো ছায়া খোঁজে, পায় না।
সুধা… ওই নামটার মধ্যেই যেন সন্ধ্যা জমে থাকে।
বছর দশেক আগের কথা,
গাছতলার ধারে দাঁড়িয়ে রমেশ বলছিল,
“আমি ফিরুম, তোর লাইগা।”
সুধা হেসে বলছিল, “তুই ফিরবি না, জানি।”
ওর কথাটাই ঠিক হল।
সুধা বিয়ে করে চলে গেল, আর রমেশ ফিরল না।
ফিরল না সময়, ফিরল না মনের মানুষ।
এখনও সন্ধ্যাবেলা এই নদীর ধারে সে আসে।
পাতার ফাঁকে চাঁদের আলো পড়ে চোখে,
যেন কারো অশ্রু।
বাতাসে সুধার গলার আওয়াজ ভেসে আসে—
নাকি সে-ই বানায় সেই শব্দ?
গাঁয়ের মানুষ কয়, “রমেশ পাগল হইয়া গেছে।”
কেউ বোঝে না, পাগল হয় সে,
যারে প্রেম নদীর মতো টানে,
কিন্তু পাড়ে ভিড়ায় না।