1. live@dailytrounkhota.com : news online : news online
  2. info@www.dailytrounkhota.com : দৈনিক তরুণ কথা :
মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
লাকসামে অর্ধশতাধিক স্পটে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদকদ্রব্য শহীদ মুহাম্মদ শাহজাহান হত্যার বিচার চায় জামায়াতে-ছাত্র শিবির মনোহরগঞ্জের বাইশগাঁওয়ে জামায়াতের নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত এনজিও কর্মীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে বিএনপি নেতা বহিষ্কার সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ফের আমির হলেন ডা. শফিকুর মনোহরগঞ্জে র‌্যালি ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে জাতীয় সমবায় দিবস পালন কিশোর কন্ঠ পাঠক ফোরামের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত মনোহরগঞ্জের উত্তর হাওলা ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ ৫ দাবিতে ইসিতে জামায়াতসহ ৮ দলের স্মারকলিপি বিএনপি কাবিননামায় সই করেছে, ‘না’ বলার অপশন নাই: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

লাকসামে অর্ধশতাধিক স্পটে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদকদ্রব্য

লাকসাম প্রতিনিধি :
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১ বার পড়া হয়েছে

কুমিল্লার একাধিক ভারত সীমান্ত দিয়ে আসা নিষিদ্ধ মাদকের সয়লাব হয়ে পড়েছে লাকসাম উপজেলা ও পৌর শহরজুড়ে অলি-গলি। প্রযুক্তির মাধ্যমে তথা ফেসবুক মেসেঞ্জারে অর্ডার দিয়ে বিকাশে টাকা পরিশোধ করে এ অঞ্চলে মাদক বেচাকেনা অতি সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। মরণনেশা ইয়াবায় ডুবে থাকছে এ অঞ্চলের উচ্চ, মধ্যবিত্ত থেকে নিন্ম শ্রেণির হাজারো শিশু, কিশোর, তরুণ ও যুবক। মাদকাসক্তের কারণে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, পারিবারিককলহ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও খুনের মতো ঘটনাও বেড়ে চলছে। বিগত কয়েক দিন যাবৎ থানা পুলিশ, সেনাবাহিনি ও উপজেলা প্রশাষন সমন্বয়ে যৌথবাহিনি পৌরসভা এবং উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু মাদকসহ বিক্রেতা-খাওয়ার সময় কয়েক জনকে আটক করলেও দমাতে পারেনি মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবিদের। তবে দিন রাত যৌথবাহিনি মাদক দমনে কাজ করে চলেছে।

জানা যায়, গত তিন মাসে পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য চিনতাই, চুরি ও ডাকাতি হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির মাধ্যমে সামাজিক ভাবে মাদক বয়কট করার জন্য উপজেলা পরিষদেও আইন শৃংখলা কমিটির প্রত্যেক সভায় মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেয়া হলেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না কেউ। মাদক পাচারের অন্যতম নিরাপদ রুট কুমিল্লা- চট্টগ্রাম রেলপথ এবং জেলার বিভিন্ন সিমান্ত চোরা দরজা গুলো। কুমিল্লা থেকে সহজেই ট্রেনে করে মাদক চলে আসেন লাকসাম রেলওয়ে জংশনে। এরপর এখান থেকে কারবারিরা এসব মাদক এক স্পট থেকে অন্য স্পটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এক কথায় মাদকের নিরাপদ রুট হিসাবে মাদক ব্যবসায়ীরা এখন লাকসামকে ব্যবহার করছেন। লাকসাম উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৮ টি ইউনিয়ন। এছাড়াও রয়েছে বেঙ্গল থানা, নিরাপত্তাবাহিনি, আনচার-বিডিপি ও জিআরপি থানা। এসব থানার অধীনস্থ বিভিন্ন স্থানে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ মাদক হেরোইন, চোলাই মদ , ইয়াবা ও গাঁজা! এক পোটলা ( ছোট কাগজের প্যাকেট) গাঁজা আনুমানিক ১০০/২০০ টাকা। এখানে প্রকারভেদে প্রতিপিছ ইয়াবা প্রায় ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত ও খুচরা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেকে ইয়াবা বহনের কাজে কোমলমতি ছাত্র ও নারীদেরও ব্যবহার করে রমরমা এ অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, যারা কিছুটা বিত্তশালী তারাই ফেনসিডিলের দিকেই ঝুঁকে রয়েছেন। অপরদিকে ইয়াবা ও গাঁজার দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় এ দু’টি মাদকের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। যেসব এলাকা নীরব ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় সেইসব স্পটে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতাদের দেখা যায়। উপজেলার রেল চিতোষী,পরানপুর বাজার, কৈত্রা, বিজরা পূর্ব বাজার, সাতবাড়ীয়া, মুদাফরগঞ্জ নগরীপাড়া,ধানকুইয়া,নাগঝাটিয়া, নোয়াপাড়া, শ্রীয়াং, সাদঘর, ইছাপুরা, মোহাম্মদপুর, কৃষ্ণপুর আশ্রয় প্রকল্প,চরবাড়ীয়া, নরপাটি, ইরুয়াইন দক্ষিণ, কামড্যা, জংশন রেল কলোনী, দূপচর বাজার,খুন্তা, বরইগাঁও, গ্রাম ও পৌর এলাকার গাজীমুড়া, ফতেপুর, সাতবাড়িয়া, উত্তরকুল, নশরতপুর, মিশ্রী, পাইকপাড়া, পেয়ারাপুর নদীর পাড়, বৌ বাজার, রাজঘাট, গন্ডামারা এলাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে প্রকাশ্যেই মাদকের কারবার চলছে।

লাকসাম থানা পুলিশ জানায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানে মাদক ব্যবসায় ২০২৪ সালের আগষ্ট থেকে ২০২৫ সালে আগষ্ট পযন্ত গত ১ বছরের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ইয়াবা ২৭টি, গাঁজা ৫টি, ফেনসিডিল ১ টি ও বিদেশী মদ ১ টি উদ্ধার করা হয়েছে। অপরদিকে লাকসাম রেলওয়ে জিআরপি থানা পুলিশ জানায়, এ থানায় ২০২৪ সালে মাদক মামলা হয়েছে ৮ টি, ২০২৫ সালে সেপ্টেম্বর পযস্ত মামলা হয়েছে ১৭ টি। এর মধ্যে ২৪ সালে গাজা ৪৪ কেজি ও ২৫ সালে আগষ্ট পযন্ত ৩ হাজার ৫৫০ পিচ ইয়াবা, ৪৮ কেজি গাজা ও ৮ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার করেন। পৌর এলাকা ও উপজেলা সীমান্তবর্তী চোরা দরজাগুলোসহ জেলা দক্ষিনের বিভিন্ন স্থানে চিহ্নিত মাদক স্পষ্ট রয়েছে ৩৪ টি। গত দুই বছরের বেড়েছে দ্বিগুন। বর্তমানে এখন তা জ্যামিতির হারে ব্যঙ্গের ছাতার মতো বৃদ্ধি পেয়ে ছড়িয়ে পড়েছে শহরের অলিগলি ও গ্রামগঞ্জে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইয়াবা ও গাঁজা এসব নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য সেবন করে একদিকে নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা ধ্বংশের দিকে ধাবিত হচ্ছে ও অন্যদিকে মাদকসেবীদের পরিবারও ব্যাপক সম্মানহানী ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন মাদককারবারী ও সেবনকারী এ প্রতিনিধিকে জানান, সোর্সদের নিয়মিত টাকা ও মাদকদ্রব্য দিলে অভিযানের আগেই মাদক ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেয় তারা।’ ফলে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানও মাঝে মধ্যে ভেস্তে যাচ্ছে। উপজেলায় নিষিদ্ধ মাদকের ভয়াবহ বিস্তারে এলাকার অভিভাবক মহল চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় রয়েছেন। মাদকের ভয়াল নেশার ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের অল্পবয়সী যুবক ছেলেরা। ধ্বংস হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও। মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়তে হচ্ছে অভিভাবকরা। এছাড়াও এলাকার ও বাইরের মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিদের জড়িত থাকায় অতীতের চেয়ে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে মাদক। মাদক সিন্ডিকেট সদস্যদের গ্রেফতার করে ভাঙা না হলে মাদক সেবী ও কারবারিদেও তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পাবে।

লাকসাম রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্তকর্মকর্তা জসিম উদ্দীন বলেন, ‘লাকসাম রেলওয়ে জংশনের রেললাইনকেন্দ্রিক মাদকের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং প্রত্যেক প্ল্যাটফর্মে নজরদারি রাখা হয়েছে। রেলওয়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের প্ল্যাটফর্ম তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া লাকসাম প্রবেশ ও বাহিরের সময় প্রতিটি ট্রেনে তল্লাশি কার্যক্রম চলছে। মাদকের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি।

এ বিষয়ে লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ নাজনীন সুলতানা এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে আমরা যেখানেই মাদকের সন্ধান পাই আমাদের টিম সেখানেই ছুটে যায়, এছাড়া নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান ও পরিচালনা করছি। আমরা মাদক ব্যবসায়ী ও ছিচকে চোরদের গ্রেফতার করেছি। আর সোর্সদের বিষয়ে আমরা আরও সতর্কাবস্থা অবলম্বন করছি।’ এ ছাড়াও দিন রাত যৌথবাহিনি এ এলাকায় মাদক, আস্র সহ অপরাধি তৎপরতা প্রতিরোধে কাজ করে চলেছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট