দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিয়ে,
গিয়েছি মোরা পাঠশালাতে।
দিতে পাড়ি সাঁকো, গিয়েছি পড়ে কতো ,
গায়ের জামা পেন্ট ভরেছি কাদা আর মাটিতে।
কাঁদিতে কাঁদিতে ফিরে এসেছি বাড়িতে,
তারপরও মা পাঠিয়েছেন পাঠশালাতে।
ছিলোনা বিজলী বাতি, ছিলোনা বড়-বড় ভবন, আর আইসিটি,
ছিলো ভাঙা মুলির বেড়া আর ঢোলকলমির লাঠি।
গণিতে পঁচানব্বই পেয়েও শাস্তি পাঁচের বাকি,
কার আছে সাধ্য রবিউল স্যারকে দিবে ফাঁকি।
পাঁচে চারের পর শব্দ হলে আ অথবা উু…..
আগের চার পঁচে নতুন পাঁচ শুরু।
কতো কঠোর ছিলেন আমাদের গুরু।
নিউজপ্রিন্ট কাগজে বারবার মুছে মুছে পেন্সিল দিয়ে লিখা।
অযথা কাগজ করলে নষ্ট,
পেন্সিল দুই আঙুলের মাঝে ঢুকিয়ে
দিতো চাপ,
ওরে বাপরে বাপ!
সেকি ব্যাথা আর সেকি কষ্ট!
এক টাকার কানি বিস্কুট আর এক টাকার চা,
ছিলো মোদের টিফিনের মজার নাস্তা।
কখনও হাওয়াই মিঠাই কখনও চিটাগুড়ের কটকটি,
কখনও চার আনার আইসক্রিমের জন্য সেকি ছুটাছুটি।
তারপর ঝর্ণা কলমে ইয়ুথ দোয়াতের কালি,
সামনে বসা বন্ধুর সাদা জামা শতশত দাগে হতো ফালি ফালি।
দুই টাকায় আলিফলায়লা সিন্দাবাদ আর এক চোখের ডাকু,
সাথে ছিলো মালিকা হামিরার জাদু,
আরো ছিলো আলাদিনের চেরাগ আর দৈত্য,
হুকুম করুন জাহাপনা, হা হা!
খুলজা সিমসিম, টিভি করতো ঝিমঝিম।
ঘুরাও বাঁশ, ঘুরাও লাঠি
গাছ বা টিনের ছালায় উঠি।
টিনের বাক্সের বায়স্কোপওয়ালা —
তারপরেতে দেখে ভালো, গাঁয়ের পথে তরি এলো, বঁধুয়া যে নাইয়র গেলো।
বা তারপরেতে কি আছে??
বুড়া বেডা বসি আছে।
তারপরেতে কি আছে??
পৌনে তিন মনের এক বেডি আছে।
বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদ বাঘ সিংহের লড়াই যেমনি,
আবাহনী আর মোহামেডান ছিলো তেমনি!
গ্রামীন সম্পর্কীয় মামাদের টিভিতে,
বিশ্বকাপ ফুটবল দেখা হতো রাত্রিতে।
উঠানের মাঝখানে থাকতো পাতা টিভি,
পুরো উঠানে বিছানো থাকতো খড় আর শীতলপাটি।
মামা,খালা, নানা আর নানী
আমার জন্মেরও অনেক আগেই দিয়েছে পাড়ি, জমের বাড়ি।
সবাই গেছে চলে স্বার্থপরের মতো মাকে ছাড়ি।
মামা, খালা, নানা -নানীর স্নেহ ভালোবাসা আর আদর যত্ন,
পাইনি জীবনে কখনও!
দাদা-দাদিও খুব ছোট বেলাতেই হয়েছিলেন গত!
তাদের কথা, তাদের ছবি মনের ক্যানভাসে ভাসেনাতো!
সন্ধ্যা হলে হারিকেনের চিমনি মাজতে কতো কেঁটেছি হাত,
ফিনকি দিয়ে হয়েছে কতো রক্তপাত!
এক টেবিলে চার ভাইবোনের পড়া,
পড়ার শেষ পর্যন্ত মা থাকতেন লাঠি নিয়ে খাড়া।
রাত দশটা পর্যন্ত পড়ার শব্দে পুরো বাড়ি উঠতো মেতে,
মাঝে-মাঝে আসতো গুরুজী,
পড়ি কিনা পরখ করতে রাতে।
তারপর রাতে বাবা আসলে বাড়ি,
এক সাথে খেয়ে ঘুমের রাজ্যে দিতাম পাড়ি।
ছোটদের প্রতি ছিল প্রেমপ্রীতি, স্নেহ -ভালোবাসা,
বড়োদের সম্মান, সালাম , শ্রদ্ধা আর ভক্তি,
সবার মাঝে কাজ করতো যেন একতাই শক্তি।
কেড়ে নিয়েছে সব স্টার জলসা, জি বাংলা, ফ্রি- ফায়ার আর পাপজি।
ঘুড়ি উড়ানো, পাড়া বেড়ানো, কলা পাতায় আম ভর্তা,
কোথায় হারিয়ে গেলো আমাদের সোনালি দিনটা।।
পেতাম যদি আলাদীনের সেই চেরাগ আর দৈত্য,
ফিরিয়ে চাইতাম সোনালি দিনগুলো সত্য।