
শহরের প্রতিটি গলি ভাঙা ইটের মতো জড়ো হয়েছে স্মৃতির ঘরে,
অথচ আমি হাঁটি তাদের মাঝ দিয়ে নির্বাক,
যেন সমস্ত শব্দ থেমে গেছে—নিঃশব্দের প্রান্তে।
আমি তাকাই আকাশের দিকে,
যেখানে রাতের তারা বিষণ্ণ হয়ে ঝরে পড়ে,
তুমি কি জানো, সেই তারাগুলোও আর স্বপ্ন দেখেনা?
তাদের আলো ফুরিয়ে গেছে কত শতাব্দী আগে,
তবু তারা জ্বলে থাকে আমাদের মায়ায়।
তুমি কি শুনেছ, শহরের দেয়ালগুলোও কথা বলে,
তাদের ফাটলগুলো মধ্যে জমাট বাঁধা গল্প,
অশ্রুতে ভেজা?
আমরা হাঁটি, দেখি—
শুধু দেখি, কথা বলি না,
যেন কথারা আমাদের কাছ থেকে পালিয়েছে, নিঃসঙ্গ কোন বনাঞ্চলে।
আমি তোমার দিকে তাকাই,
তুমি কবে থেকে এমন নীরব হলে?
এক সময় আমরা বৃষ্টির ফোঁটার সাথে কথা বলতাম,
আমাদের চোখে ছিলো স্বপ্ন, কণ্ঠে ছিলো স্বপ্নের সুর।
আজ সেই সুরের শেষ লাইনটিও মিলিয়ে গেছে—
আমাদের ভিতর জমে উঠেছে একরাশ নীরবতা।
তুমি কি এখনো শুনতে পাও,
সেই পুরোনো দিনের কোলাহল, মানুষের চিৎকার,
যেখানে ভালোবাসা ও বিদ্রোহ একসাথে মিশে যেত?
নাকি সবকিছু মিশে গেছে রোদ্দুরের তলায়,
আমাদের ছায়া দীর্ঘ হয়েছে, তবু আমরা হারিয়ে গেছি নিজের ছায়াতলে।
তুমি কি কল্পনা করতে পারো,
এই শহর একদিন আমাদের কাছে কতটা জীবন্ত ছিলো?
তার প্রতিটি ইট, প্রতিটি জানালা আমাদের পরিচিত ছিলো,
কিন্তু এখন সবকিছু অচেনা হয়ে গেছে,
তুমি-আমি অচেনা হয়ে গেছি নিজেদের কাছেও।
আমাদের হাতে সময়ের ভাঙা কাঁচ,
আমরা তাকিয়ে থাকি তার নিঃশেষিত প্রান্তে,
যেখানে একসময় ছিলো আলো, স্বপ্ন, কোলাহল।
এখন শুধু নীরবতা,
অজস্র নীরবতা,
যেন সবকিছু একবারেই থেমে গেছে—
আমরা হাঁটি, আর কথা বলি না।