’২৪ এর বিপ্লবের এক বছর পূর্তি হয় এবছর ৫ই আগস্ট। ঠিক সেদিনই হঠাৎ করে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস স্যার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে জানিয়ে দিলেন আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে চিঠিও দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
# জনগণ হতাশ বিএনপি খুশি, কেনো?
ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস স্যারের এই ঘোষণা শোনার পর থেকে সাধারণ জনগণ এবং সমস্ত রাজনৈতিক দল সম্পূর্ণ হতাশ। জনগণ হতাশ এই কারণে যে, তারা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকে ৫ বছর ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছিল। আর রাজনৈতিক দলসমূহ হতাশ এই কারণে যে, ডক্টর ইউনুস তার ঘোষিত ওয়াদা (বিচার সংস্কার সম্পন্ন না করা) ভঙ্গ করেছেন। এছাড়া তিনি সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা না করেই হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অবশ্য একমাত্র বিএনপি এ ঘোষণা শুনে খুশিতে আটখানা। তাদের রীতিমতো ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে। কারণ এতে তাদের দীর্ঘদিনের টেনশন দূর হয়েছে। বড় কোন আন্দোলন ছাড়াই নির্বাচনের রোডম্যাপ আদায় হলো। ডক্টর ইউনুস যেহেতু ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে বলে ফেলেছেন, ফলে এই কথা আর নড়চড় হবে না। যেহেতু ডঃ ইউনুস রাজনীতিবিষ না, সেহেতু তার কথার নড়চড় হবে না। এই কথা শিশু থেকে পাগল সবাই বিশ্বাস করে।
# রাজনৈতিক দলগুলো কেন অসন্তুষ্ট?
রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে, বর্তমান ইউনুস সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। প্রশাসন কোন কাজ করে না। কোন অপরাধীকে ধরে না। শুধু আলোচিত হলে সেটা নিয়ে একটু মাথা ঘামায়। যার কারণে সবাই ফ্রি স্টাইলে অপকর্ম করে যাচ্ছে। এই দুর্বল প্রশাসন পুলিশ দিয়ে ইউনুস সরকার কিছুতেই ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। ফলে কেন্দ্র দখল, ব্যালট দখল, সিল মারা এটা অবাধে করা যাবে। এভাবে সারাদেশের সব আসনে দিনের ভোট দিনেদুপুরে ডাকাতি হবে। এজন্যই ভোটারদের এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মনে সুষ্ঠু নির্বাচন হাওয়া নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
# দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামানো হচ্ছে না কেনো?
নির্বাচনের স্পষ্ট ঘোষণা আসার পর পরই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য দ্রুতগতিতে বেড়ে যাচ্ছে। যে ডিমের ডজন ডক্টর ইউনুছ সরকার ১১০ টাকায় নামিয়ে আনেন, সেই ডিমের ডজন আবার ১৫০ টাকা হয়ে গেছে। যে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকায় নামিয়ে আনেন, সেই পেঁয়াজের কেজি আবার ১০০ টাকা হয়ে গেছে। অর্থাৎ এটা পরিস্কার ডক্টর ইউনুস এখন সরকার পরিচালনার প্রতি আর আগের মতো মনোযোগ দিচ্ছেন। মূলত ডক্টর ইউনুস জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন-
দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার কারণে,
ভারতের চোখে চোখ রাঙিয়ে কথা বলার কারণে, এবং
দেশকে অর্থনৈতিকভাবে মজবুত করার কারণে।
যেহেতু তিনি ক্ষমতায় থাকছেন না, সেহেতু জনগণের খুশির দিকে তার আর তাকানোর কিছু নাই!
# ডক্টর ইউনূসের দেওয়া স্বাধীনতার কুফল!?
ডঃ ইউনুস ভেবেছিলেন দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলো এবার নতুন বাংলাদেশে ইউরোপের স্টাইলে গণতন্ত্রের চর্চা করবে। তাই তিনি দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে এমন অবাধ করে দিয়েছিলেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না দিলে- “তোমাকে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেওয়া হবে” এমন কথা বলারও সাহস তৈরি হয়ে গেছে। অর্থাৎ যে যেভাবে পারছে নোংরামি করছে, গালি দিচ্ছে, মিথ্যা বলছে, গুজব ছড়াচ্ছে। সরকারের উপদেষ্টাদেরকেও মন ভরে গালি দিচ্ছে। সরকার কারো মত প্রকাশে বাধা দেয়নি, দিচ্ছেন না। ভুল তথ্যের প্রচারের জন্য, গুজব ছড়ানোর জন্য, সরকার কোন মামলাও করছে না, ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদও করছে না।
এতে যা হচ্ছে-
দিনে দুপুরে চাঁদাবাজি করছে, মানুষ মেরে ফেলছে, যার যা খুশি করে ফেলছে, বাড়িঘর দোকানপাট ভেঙ্গে ফেলছে, জ্বালিয়ে দিচ্ছে। রাষ্ট্রের সম্পদ মাটি বালি পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে, পাহাড় কেটে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কিছুই করতে পারছে না। শুধু অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। কোন কাজের কোন জবাবদিহিতা নাই। কোন মামলা নাই, কোন ভয় নাই, মনে হয় যেন দেশে সরকারও নেই।
পুলিশ আছে কিন্তু কোন আন্দোলনে বাধা দিতে পারে না, কথায় কথায় সচিবালয় ঘেরাও করে ফেলে, সচিবালয়ে ঢুকে যায়। এমনকি যমুনাও ঘেরায় করে ফেলে। পুলিশ গুলি করা তো দূরে থাক, লাঠি চার্জ পর্যন্ত করতে পারে না। এক কথায় এটা একটা অপরাধের বেহেস্ত খানা। মানে “আমার ইচ্ছে হলো অমুক কাজটা করবো, সাথে সাথে করা যাচ্ছে।” বেহেশতিরা এরকম একটা পরিবেশ পাবে। অর্থাৎ তাদের মনে কোন কিছু চাইলেই সামনে সেটা চলে আসবে। বাংলাদেশের সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজরা চোরেরা এখন বেহেশতি সুখ উপভোগ করছে। মাশাআল্লাহ!

ডক্টর ইউনূস এখন মাইনকার চিপায় !
ডক্টর ইউনূস এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছেন যে, দেশ তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তাই তিনি এখন হতাশ। এই অনিয়ন্ত্রিত গতিকে তার পক্ষে আর নিয়ন্ত্রণে আনা কিছুতেই সম্ভব না। গাড়ি ব্রেক ফেল করলে যেমন হয়, সেই অবস্থা হয়েছে। তারমানে এই অবস্থায় এই প্রশাসন দিয়ে ভোট আয়োজন করা, একটা ছেলে খেলার কাজ হবে। যে যেভাবে পারবে ভোটকেন্দ্র ব্যালট সিলমোহর সবকিছু তারা চিনিয়ে নিবে। আর এই বিতর্কিত নির্বাচন দিয়ে তিনি ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় থেকে ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হবেন।
এই দুশ্চিন্তা তাকে এখন হতাশ করে দিয়েছে। এই অবস্থা থেকে তিনি দ্রুত বের হতে চান। এ পর্যন্ত তিনি তার ওয়াদা একটাও ভঙ্গ করেননি। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন দিবেন বলেছেন। প্রথমে এপ্রিলের ব্যাপারে মত দিয়েছিলেন। বিএনপি অনুরোধ করায় তিনি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেন। তারমানে তার কথার নড়চড় হয়নি। এখন তিনি শুধু পুতুলের মত বসে থাকবেন, কোন ব্যবস্থা নিতে পারবেন না, নির্বাচন হয়ে যাবে। কোন একটি দল জোরজবরদস্তি করে নির্বাচনে জিতে চলে আসবে। তারা আবার ৩৪ বছর ক্ষমতা উপভোগ করবে। এটা তিনি পরিস্কার বুঝে ফেলেছেন।
# ডক্টর ইউনুছকে ভয় দেখানো হয়েছে!
ডক্টর ইউনূসের আচরণে এখন এটা স্পষ্ট যে, তাকে কোনো একটি জায়গা থেকে খুব কঠিন ভাষায় ভয় দেখানো হয়েছে। এই ভয় মৃত্যুর ভয় নয়, তবে সম্মানহানির ভয়। তার মত আন্তর্জাতিক সম্মান কুড়ানো ব্যক্তিত্বের চরিত্রে যদি এক ফোঁটা কালো দাগ কেউ লাগিয়ে দেয়, সেটা তার মৃত্যুর চাইতেও ভয়াবহ হবে। তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমরা যা বলি শুধু এটাই করবেন। এদেশের মানুষ ডক্টর ইউনুসকে বিশ্বাস করেছেন যে, তিনি পারবেন এই দেশ থেকে সব অন্যায় দূর করতে। তার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি সেটা করে দেখিয়েছেনও। কিন্তু বেয়াদবদের কাছে তো হার মানতেই হয়। রাজনীতি যখন বেয়াদবদের হাতে চলে যায়, তখন সবাই ‘দোয়া ইউনুস’ পড়ে। আর ডঃ ইউনুসের মতো ভদ্রলোকরা চিৎকার করে বলতে হয়- “ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।”
________________
@ কলামিস্ট হারুনুর রশিদ আরজু।