ফ্যাসিস্টের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই বরং দেখি দাম্ভিকতা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। রোববার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে আহত, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ও অসহায় অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের এই মুক্তির মন্দিরে সোপান তলে, কতো প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে’, আমাদের অশ্রুজলের চাইতেও বেশি বলতে হবে, আমাদের রক্তধারায় লিখিত আছে এই ফ্যাসিস্টদের পতনের আন্দোলনে শহীদদের কাহিনী- কতো নির্মম, কতো নিষ্ঠুর আচরণ এদেশের মানুষ একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে, সেই বেদনার ইতিহাস, সেই বেদনার ধারাবিবরণী, সেই বিবরণীর উপন্যাস ভবিষ্যতে কতো লিখিত হবে, অজস্র লিখিত হবে, আমরা তখন বুঝতে পারবো কতো নিষ্ঠুর আচরণ স্বীকার করেছিল এই ভূখণ্ডের মানুষ।
তিনি বলেন, আমরা দেখি, সেই ফ্যাসিস্টের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই, বেদনা নেই, কোনো পরাজয়ের স্বীকারোক্তি নেই বরং দেখি দাম্ভিকতা। সেটা দেশের মানুষের জন্য আমরা বলবো, সেই স্বৈরাচারের দাম্ভিক আচরণ আমরা যতই দেখবো আমাদের মনে হবে যে, ভবিষ্যতে এরকম কোনোভাবে ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি যাতে না হয়, সেইভাবে যেন আমরা রাষ্ট্র ব্যবস্থাটা পরিচালিত করি।
সালাহউদ্দিন বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এইভাবে গ্রহণ করি, যা আমরা প্রতিদিন সংস্কারের মধ্যদিয়ে যাবো, একটি জনকল্যাণমুখী সংস্কারের মধ্যদিয়ে যাবো, একটি জনকল্যাণকর রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণের জন্য কাজ করবো। আমরা এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে ইদানীং সবাই একটা কথা শুনি যে, সংস্কার হচ্ছে। রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের মধ্যদিয়ে কাক্সিক্ষত মানবিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। কারণ এই রাষ্ট্র ব্যবস্থাটা যারা পরিচালনা করবে, তাদের মানসিক সংস্কার হওয়া দরকার, জনগণের মানসিক সংস্কার হওয়া দরকার, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কার হওয়া দরকার এবং এই সমাজের মানুষের, আমাদের, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, তাদের সম্মিলিতভাবে সবার মানসিক সংস্কারের মধ্যদিয়ে আমরা যদি রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারটা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলেই দুইয়ে দুইয়ে চার হবে, তাহলেই আমরা একটা কল্যাণমূলক মানবিক রাষ্ট্র পেতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারের মধ্যদিয়ে আমরা একটা গণতান্ত্রিক সংবিধান পেলাম। সেই গণতান্ত্রিক সংবিধানের মাধ্যমে যে সরকার ব্যবস্থা গঠিত হবে, তাদেরকে সেই ব্যবস্থা যারা পরিচালনা করবে, তাদেরকে মানসিক সংস্কার এবং দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টায় এবং অপরপক্ষে যারা রাষ্ট্রের জনগণ যারা বেনিফিয়ারি যারা সরকার যাদের কাছে দায়বদ্ধ, সমাজের কাছে দায়বদ্ধ তাদেরও যদি দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টায় তাহলে মানবিক রাষ্ট্র হবে কীভাবে?
বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমরা জনগণ হিসেবে যদি মনে করি, সব দায়িত্ব সরকারের, সেটা একটা ভুল ধারণা। রবার্ট কেনেডি প্রথমবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন, আমি তিন জেনারেশনকে কিছু দিতে পারবো না, হয়তো থার্ড জেনারেশনকে কিছু দিতে পারি।
তিনি বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমন হবে সরকার আমাদের জন্য কী করে তা নয়। জনগণ দেশের জন্য কী করবে সেটাও ভাবতে হবে? এটাই হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। তাহলেই আমরা জনগণ এবং দায়বদ্ধ সরকার জনগণের কাছে, এই উভয়ে মিলে একটা আমাদের কাক্সিক্ষত রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা গতিশীল করতে পারবো। যেই স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতার শহীদদের, মুক্তিযোদ্ধাদের, যেই স্বপ্ন ছিল ২০২৪ সালের আমাদের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের যারা রক্তদান করেছেন, যারা জীবন দিয়েছেন, যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন তাদের। আমরা যাতে সেই সমাজ নির্মাণ করতে পারি যারা আজকে পঙ্গুত্ববরণ করেছে, তাদের সন্তানরা যেন তাদের কাক্সিক্ষত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা দেখে যেতে পারে, আমরা সবসময় বলি শত সহস্র শহীদদের রক্তের আকাক্সক্ষা আমাদের পূর্ণ করতে হবে।
‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও সদস্য জাহিদুল ইসলাম রনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন বকুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।