জানা গেছে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে আট দিনের রিমান্ডে থাকা মিন্টু নতুন করে কোনো তথ্য দিচ্ছেন না। আর কেউ এ ঘটনার পেছনে জড়িত রয়েছে কি না তদন্তসংশ্লিষ্টদের এমন প্রশ্নে চুপচাপ থাকছেন। তবে গ্যাস বাবু এবং শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ফরিদপুরের ভাঙ্গা চত্বরে গাড়িতে বসে বৈঠকের কথা বলার পর অনেকটা অনুতপ্ত হচ্ছেন তিনি।
এদিকে এ ঘটনায় গ্রেফতার গ্যাস বাবু গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমানের আবেদন আমলে নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত বাবুর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবি সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিনের সঙ্গে আনারের বিরোধ ছিল। শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গেও এমপি আনারের আদর্শের বিরোধ ছিল। তবে এদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল গ্যাস বাবুর। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য গ্যাস বাবু জানাতেন মিন্টুকে। গ্যাস বাবু ও মিন্টু এসব বিষয় জানলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাননি।
সূত্র আরও জানায়, আনার নিখোঁজের ঘটনায় সাইদুল করিম মিন্টুর জড়িত থাকার বিষয়টি প্রথমে সামনে আসে আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে। শিমুল স্বীকারোক্তিতে তার নাম বলেন। এ ছাড়া কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুর নামও ফাঁস করেন শিমুল। এরপর গোয়েন্দারা খুঁজতে থাকেন কেন, কীভাবে, কী কারণে এ ঘটনায় মিন্টুর নাম সামনে আসছে। এর উত্তর মেলাতে গিয়ে গোয়েন্দাদের তদন্তে সন্দেহভাজন কিছু বিষয় ঘুরপাক খায়। আনার নিখোঁজের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগে কেন গ্যাস বাবুর মোবাইলে থাকা ছবি দেখে তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মিন্টু? নিজ জেলার একজন এমপির এমন ঘটনা জানার পরও কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাননি? জানা গেছে, গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য গ্যাস বাবুকে আদালতে পাঠানোর সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ সাইদ আদালতে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন, তাতে গ্যাস বাবুর সংশ্লিষ্টতা বর্ণিত আছে। ওই জবানবন্দিতে ভিকটিমকে প্রলুব্ধ করে অপহরণ ও হত্যা সংশ্লিষ্টতার সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্তে কাজী কামাল আহমেদ বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে আর্থিক লেনদেনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। গ্যাস বাবুর সঙ্গে ঘাতক শিমুল ভূঁইয়ার কিছু পরিকল্পনার কথাও প্রকাশ পায়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে গ্যাস বাবু জানায় যে, ঘাতক শিমুল ভূঁইয়া ১৫ মে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এসে ১৬ মে রাতে তার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে। ১৭ মে পরিকল্পিতভাবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে শিমুল ভূঁইয়ার গাড়িতে বসে তারা কথা বলেন। এমপি আনারকে অপহরণ ও পরবর্তীতে হত্যা সংক্রান্ত ছবি, টাকা-পয়সা লেনদেন বিষয় নিয়ে গোপনীয় মিটিং করে। এমপি আনারকে হত্যার পরবর্তী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিমুল ভূঁইয়া দাবিকৃত টাকা চায় গ্যাস বাবুর কাছে। বাবু ওই টাকার আংশিক ২৩ মে শিমুল ভূঁইয়াকে দেবে বলে আশ্বাস দেয়। রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাবু ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
শাহিন ছাড়া তদন্ত অসম্পূর্ণ : শুরু থেকেই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তদন্ত সংস্থাসহ বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহিন। তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনতে ভারতের সাহায্য চেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিজস্ব প্রক্রিয়ায়ও আক্তারুজ্জামানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। তার মোবাইল নম্বর, পাসপোর্টসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে এরই মধ্যে আইজিপি ইন্টারপোলকে অবহিত করেছেন। তাকে দেশে ফেরাতে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাস সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, ঝিনাইদহে যারা এমপি আনারের বিরোধী মেরুতে অবস্থান নিয়ে রাজনীতি করতেন তাদের নিয়ে নতুন রাজনীতি শুরু হয়েছে। আনার হত্যার সঙ্গে তারাও জড়িত বলে আনারের ঘনিষ্ঠজনরা প্রচার করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তার কাছের লোকজনও আতঙ্কে রয়েছেন। প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন আনোয়ারুল আজিম। বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচ দিন পর ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি এ সংসদ সদস্যের। ২২ মে খবর ছড়ায়, কলকাতার পাশের নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীভা গার্ডেনস নামে একটি বহুতল আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে এমপি আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভিতরে পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মৃতদেহ।

																
								
                                    
									
                                
							
							 
                    






